ছায়েদ আহামেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী) ।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় অঙ্ক মেলাতে না পারায় এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে মারধর করে অজ্ঞান করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে গণিত শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে অভিভাবকমহল ও স্থানীয় এলাকাবাসী। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে জনতার রোষানল থেকে বাঁচাতে অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিশ নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়।
শনিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে হাতিয়া উপজেলার চরচেঙ্গা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত শিক্ষক রেজাউল করিম ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী (গণিত) শিক্ষক।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ক্লাসে অঙ্ক মেলাতে না পারায় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মুনতাহা আকতার মীম (১৩)-কে বেধড়ক পেটান শিক্ষক রেজাউল করিম। এতে ছাত্রীটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে সহপাঠীরা দ্রুত স্থানীয় পল্লি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি হলে মীমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে ছাত্রীটির মা হাতিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে তিনি বলেন, “আমার মেয়ে অঙ্ক না পারায় স্যার ক্ষিপ্ত হয়ে পিঠে আঘাত করে। এতে মেরুদণ্ডে আঘাত পায়। পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।”
এদিকে, ঘটনার পর শনিবার দুপুরে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে। এ সময় অভিভাবক ও স্থানীয়রা শুধু ওই শিক্ষক নয়, বরং মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে চলা “প্রাইভেট বানিজ্য” নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তাদের অভিযোগ—ইংরেজি, গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রাইভেট পড়ানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী প্রাইভেট না পড়লে তাকে ক্লাসে অপমান, বঞ্চনা কিংবা শাস্তির মুখে পড়তে হয়। মীমও সেই অন্যায়ের শিকার।
পরে বিক্ষুব্ধরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বরখাস্তের দাবিতে পরিবেশ উত্তপ্ত করে ফেললে- জাহাজমারা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষক রেজাউল করিমকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়।
জাহাজমারা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. খোরশেদ আলম বলেন, “বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে রক্ষা করতে শিক্ষককে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার মামলা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ঘটনায় পুরো এলাকা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। স্থানীয়রা বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে যদি এ ভাবে পিটিয়ে অজ্ঞান করা হয়,তাহলে বাকি শিক্ষার্থীরাও তো নিরাপদ নয়। তাই তারা প্রশাসনের নিকট অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
চরচেঙ্গা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা জুবায়ের বলেন, “ঘটনার পরপরই আহত ছাত্রীকে হাসপাতালে পাঠানো হয় এবং চিকিৎসা খরচ বহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ (শনিবার) উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “অভিযুক্ত শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।”