————-ইমরান হোসাইন তুহিন
আমি ইমরান হোসাইন ডাকনাম তুহিন। ক্লাস নাইন থেকেই রাজনৈতিক সচেতন ছেলে হিসেবে নিজেকে সামনের দিকে অগ্রসর হই। মনে আছে যখন দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি-জামায়াত। আমরা স্থানীয়ভাবে সবাই একত্রিত হয়ে দুটা প্রতিষ্ঠান নিজেরা ঘন্টা বাজিয়ে ছুটি দিয়া দিই। হামদর্দ মাদ্রাসায় কিছু আবাসিক ছাত্র ছিল। তাদের নিয়া সকাল বেলা স্থানীয় বাজারে টায়ার জ্বালিয়ে ফিকেটিং করি। রাতের বেলা মিস্ত্রিসহ সরকারি গাছ কেটে হরতাল পালন করি। এলাকায় এটাই ছিল প্রথম এবং শেষ অবরোধ কর্মসূচি। ২০১৩ সালে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি পালনের উদ্দেশে ঢাকায় যাই। পল্টনে ভাইয়ার বাসায় উঠি। রাতের বেলা পুলিশ তল্লাসি করতে আসে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছোট দেখে আর নেয়নি। পরেরদিন সকালে ভাইয়া তার অফিসে নিয়া বসায় রাখছিল। আমাকে আর রাজপথে নামতে দেয়নি। যদিও আমাকে আমার প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল ফোন দিয়ে না নামতে বলেছিলেন। এরমাঝে বড় একটি ঘটনা ঘটে। জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয় পোড়ানো হয়। সেখানে আমরাই নেতৃত্ব দিই। যদিও সে প্রোগ্রামে অনেক আন্দোলনকারী শিবির-বিএনপি আহত হোন। ২২/২৩ কিলো দুর থেকে এসে ওই বয়সে এসব করতাম।

এরপর ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে গ্রাম ছেড়ে মাইজদি আসি। মেসে থাকি আর লজিং,টিউশন করানো শুরু করি। ১৪-১৬। হঠাৎ চারদিকে জঙ্গী নাম দিয়ে ষাঁড়াশি অভিযান শুরু হলো। অভিযান হলো রাতের একটায় আমার মেসে। ভাগ্যক্রমে আমি পালিয়ে যেতে সক্ষম হই। পরে আমার রুমমেট, মেস মালিককে নিয়ে যায়। শর্ত দেওয়া হয় আমাকে হাজির করাতে। আমি নাকি মোস্ট ওয়ান্টেড। কারণ আমার ব্যক্তিগত একটা ডায়েরি ছিল। যেখানে আমি লীগের বিরুদ্ধে সব ধরণের আন্দোলনের বিষয়গুলো লিপিবদ্ধ করতাম। সেটা দেখে তারা আমাকে বিগ ফিশ মনে করা শুরু করল। এবং রুম থেকে আমার ছবি, একটা মার্কশিট নিয়ে গেছিল। এ ঘটনার পর আমি মাইজদি ছেড়ে দিই ২ মাসের মত। এলাকায় যাওয়ার পর বাবা আমাকে নানা বাড়ি গিয়ে থাকতে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বন্ধুদের আমাকে এড়িয়ে চলতে বললেন। একবন্ধু ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করে আবার ডিলেট দিতে বাধ্য হলেন। এভাবে দুমাস কাটিয়ে দিই। পরিস্থিতি কিছুটা ঠান্ডা হলে অন্যত্র মেস নিই। ইন্টারমিডিয়েট দিয়ে কোচিং শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পাই। এদিকে বিয়েটাও গোপনে করে ফেলি।