শিরোনাম:
প্রতিবেশীর ইঁদুর মারার বৈদ্যুতিক ফাঁদে প্রবাসীর মৃত্যু বিষাক্ত ধাতু মুক্ত হচ্ছে, ভবিষ্যতের জন্য নতুন হুমকি নোবিপ্রবির মেগা প্রকল্প সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চায় শিক্ষার্থীরা ৮ দফা দাবিতে নোয়াখালীতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এটিআই শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি ব্যবসায়ীকে গুলি করে মোটরসাইকেল ছিনতাই দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে দুটি বাস পুড়ে চাই। ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে চোর সন্দেহে দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ১ নোবিপ্রবির তৃতীয় একাডেমিক ভবনসহ ৩৩৪ কোটি  ৪৬ লক্ষ টাকার প্রকল্প একনেকে পাশ গ্লোবাল লিডার ইন এক্সপোর্ট অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত মওদুদ এলাহী হাতিয়ায় খালেদা জিয়া’র রোগমুক্তি ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

ঋতু পরিবর্তনজনিত সংক্রমণ ঘরে ঘরে জ্বর

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫

রাজধানীজুড়ে ভাইরাস জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডেঙ্গু উপসর্গে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। ফাইল ছবি

তিন দিন ধরে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, জ্বর, হালকা কাশি নিয়ে রাজধানীর রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালে এসেছেন খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা রুবাইয়া তাসনিম। তিনি বলেন, গত তিন দিন ধরেই শরীর ব্যথা-জ্বর। মাঝে মাঝে জ্বর একটু কমে, আবার বাড়ে। ওষুধ খেলে কিছু সময়ের জন্য আরাম লাগে। আমার ছোট বোনও জ্বরে ভুগছে। বাসা থেকে বের হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।

শুধু তাসনিম বা তার বোনই নন, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হঠাৎ করে বেড়েছে সর্দি, জ্বর, গলাব্যথা ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ঢাকায় বলা যায় ঘরে ঘরে মানুষের জ্বর। এক পরিবারের একাধিক সদস্যও একসঙ্গে ভুগছে জ্বরে।

হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ্বর নিয়ে আসা রোগীদের বেশিরভাগই করোনা, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড কিংবা সাধারণ মৌসুমি ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ কেউ করোনা, ডেঙ্গু কিংবা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলেও বেশিরভাগই ঋতু পরিবর্তনজনিত বা সাধারণ ফ্লুতে আক্রান্ত। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার ভাইরাল ফ্লুর সংক্রমণ বেশি। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জনসচেতনতা কম থাকায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দ্রুত।

উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে- চার থেকে পাঁচ দিন স্থায়ী জ্বর, গলাব্যথা, হালকা কাশি, কাশির সঙ্গে বমি, মাথা ও শরীর ব্যথা, দুর্বলতা এবং কিছু ক্ষেত্রে হালকা শ্বাসকষ্ট।

চিকিৎসকদের ভাষ্য, একজন সদস্য আক্রান্ত হওয়ার পর পরিবারের অন্য সদস্যরাও অল্প সময়ের মধ্যে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেক পরিবার থেকেই একই দিনে দুই বা তিনজন রোগী হাসপাতালে আসছেন। উপসর্গ প্রায় সবার ক্ষেত্রেই মিলছে, যার ফলে চিকিৎসকদের ধারণা- এটি ঋতু পরিবর্তনজনিত সংক্রমণ ও শ্বাসতন্ত্রের রোগের সম্মিলিত ফল।

হাসপাতাল সূত্র বলছে, বিদায়ী জুলাই মাসের প্রথম ১৪ দিনের তুলনায় পরের ১৪ দিনে ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগী ভর্তির হার। সেবা দিতে গিয়েও অনেকটাই চাপে পড়েছে হাসপাতালগুলো।

হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ : রাজধানীজুড়ে হঠাৎ করে ভাইরাস জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডেঙ্গু উপসর্গে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১৪ দিনে হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮ হাজারের বেশি রোগী। আর ১৪ থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে চিকিৎসা নিয়েছেন সাড়ে ৯ হাজারের বেশি রোগী। এই ১৪ দিনের ব্যবধানে রোগী বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি। একই সময়ে এই হাসপাতালে করা হয়েছে ৭৫ হাজারের বেশি ভাইরাস জ্বর-সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১১তলায় ডেঙ্গু কর্নার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ভর্তি রয়েছেন ৩৪ জন রোগী, যাদের মধ্যে ১৪ জন নারী। আর শিশু বিভাগের আটতলার ডেঙ্গু কর্নারে চিকিৎসা নিচ্ছে ১১ জন শিশু। হাসপাতালের তথ্য বলছে- ১ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৪৫ জনে। এর মধ্যে প্রথম ১৪ দিনে ভর্তি ৭২৫ জন এবং পরের ১৪ দিনে ভর্তি হয়েছেন ৮২০ জন। হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য বলছে, সাধারণ ভাইরাস জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ডেঙ্গু মিলিয়ে রোগীর চাপ আগের তুলনায় দ্বিগুণের কাছাকাছি।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানের তুলনায় আক্রান্ত কয়েকগুণ বেশি : সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু সরকারি হাসপাতালেই নয়, রোগীর চাপ বেড়েছে বেসরকারি হাসপাতালেও, যাদের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান সামনে আসছে না। এর বাইরেও অসংখ্য রোগী এখন হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন, যাদের হিসাব সরকারি কোনো পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না।

চিকিৎসক ও ফার্মেসিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার সর্দি-জ্বর, গলাব্যথা, কাশি ও দুর্বলতা নিয়ে বাসায় থেকেই সেবা নিচ্ছেন-ফার্মেসির পরামর্শ, পরিচিত চিকিৎসক বা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে। ফলে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা হাসপাতাল পরিসংখ্যানের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগীদের তথ্য বাইরে না আসায় পরিস্থিতির পূর্ণমাত্রা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা মো. জাবেদ হোসেন। তিনি বলেন, প্রথমে আমি আক্রান্ত হই। এর এক দিন পর আমার স্ত্রী এবং পরে ছেলে হালকা জ্বরে পড়ে। সবার একই উপসর্গ- জ্বর, কাশি, গলাব্যথা। শরীর খুব দুর্বল লাগছে। হাসপাতালে গেলে সময় আর টাকা দুই-ই বেশি লাগতো, তাই এক আত্মীয় ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ নিচ্ছি। মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছে জ্বর কমে যাচ্ছে, আবার শরীর গরম হয়ে যায়। পুরো পরিবারই ঘরবন্দি হয়ে আছি এখন।

কী বলছেন, চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা : রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে গিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন প্রতিদিনই এমন বহু রোগী আসছেন, যারা একই পরিবারের দুই বা তিন সদস্যকে নিয়ে এসেছেন। কারো ছেলে বা মেয়ে আগে আক্রান্ত হয়েছে, তার পরদিনই মা-বাবা বা অন্য ভাইবোনও জ্বরে পড়ে যাচ্ছেন। এমন ধারাবাহিক সংক্রমণের ঘটনায় চিকিৎসকরা মনে করছেন, এটি ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো ভাইরাস সংক্রমণ, যার সঙ্গে রয়েছে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো ভাইরাসের প্রভাব।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. মেহেদী হাসান বলেন, আমরা গত দুই সপ্তাহ ধরে যেটা সবচেয়ে বেশি দেখছি, তা হলো- একটা পরিবারের একজন সদস্য প্রথমে আক্রান্ত হচ্ছে। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাড়ির অন্যরাও একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। উপসর্গগুলো প্রায় একই শরীর ব্যথা, গলা খুসখুসে ব্যথা, মাঝারি জ্বর, মাথা ভার লাগা এবং কিছু ক্ষেত্রে হালকা কাশি। তিনি বলেন, আমরা গত এক সপ্তাহে এমন অন্তত ১০-১২টি কেস পেয়েছি, যাদের একেক করে পরিবারের একাধিক লোক একসঙ্গে জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। একইসঙ্গে সবাই আক্রান্ত হওয়া এবং উপসর্গ প্রায় একরকম হওয়া— এটি ভাইরাসের উচ্চসংক্রমণ ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ভাইরাস জ্বরের পাশাপাশি ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। তিনি জানান, ডেঙ্গুতে সাধারণত মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, পাতলা পায়খানা এবং পেট ব্যথার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে চিকুনগুনিয়ায় শরীরজুড়ে ব্যথার পাশাপাশি বিশেষ করে হাড়ের সন্ধিতে এবং মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। অনেক সময় লালচে র‍্যাশও ওঠে। দুই রোগের উপসর্গ মিলিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, হঠাৎ গরম, আবার বৃষ্টি- আবহাওয়ার এমন চরম বৈচিত্র্যের কারণে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এখন মৌসুমি ভাইরাস জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে আবার ভিন্ন চিত্র। সেখানে পানিবাহিত রোগ যেমন টাইফয়েড ও পেটের সমস্যা বেশি হচ্ছে। এসব রোগী সাধারণ মৌসুমি জ্বরের তুলনায় একটু বেশি জটিলতায় পড়ছেন।

ডা. আবদুল্লাহ আরোও বলেন, এই ধরনের ভাইরাস জ্বরে বেশি কিছু করার দরকার নেই। সাধারণ প্যারাসিটামল খেলেই উপসর্গ চলে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কোনো প্রয়োজন নেই, বরং তা ক্ষতিকর হতে পারে।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে আসা বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই জ্বর, গলাব্যথা, কাশি, দুর্বলতা- এই চারটি উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। এগুলো সাধারণ ভাইরাস ইনফেকশনের লক্ষণ হলেও পাশাপাশি ডেঙ্গু এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার সংক্রমণও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।

তিনি বলেন, আমাদের ধারণা, একাধিক ভাইরাস এখন একসঙ্গে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে। কেউ কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা না নিয়েই জটিল অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন, এতে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ