• শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
সড়ক নির্মাণে অনিয়ম, কাজ বন্ধ দিলেন এলাকাবাসী নোবিপ্রবিতে ‘সি’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা  সম্পন্ন বেগমগঞ্জে অফিস ঢুকে প্রধান শিক্ষককে মারধর নোবিপ্রবি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিনিময় চাটখিলে স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে বিষপান, স্ত্রীর মৃত্যু,স্বামী হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পেলেন জিয়া মঞ্চের সভাপতি পদ নোয়াখালীতে কৃষককে মারধর ও জমি দখলের অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে নোয়াখালীতে রাতভর ভারি বৃষ্টি বিপাকে পড়েছেন কৃষক উচ্চশিক্ষায় প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দ্বার উম্মোচন সময়ের দাবি: তুরস্কের কনফারেন্সে নোবিপ্রবি ভিসি গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৯ জন ট্রাইব্যুনালে

ইসলামী আইন, দিকনির্দেশনার মূল ভিত্তি

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

 আঃ ছালাম খান

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা প্রদান করে। ইসলামী আইন বা শরিয়াহ এই দিকনির্দেশনার মূল ভিত্তি, যা কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াসের উপর প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে ইসলামী আইন ও তার প্রয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই প্রবন্ধে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রচলিত ইসলামি আইন ও তার প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করা হবে।

ইসলামী আইনের উৎস ও ভিত্তি

ইসলামী আইন মূলত চারটি উৎসের উপর ভিত্তি করে গঠিত:

কুরআন: ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, যা আল্লাহর বাণী হিসেবে বিবেচিত।

হাদীস: নবী মুহাম্মদ (সা.) এর বাণী, কাজ ও অনুমোদন।

ইজমা: ইসলামি পণ্ডিতদের সর্বসম্মত মত।

কিয়াস: যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি।

এই চারটি উৎসের উপর ভিত্তি করে ইসলামী আইন গঠিত এবং মুসলিম সমাজে প্রয়োগ করা হয়।

বাংলাদেশে ইসলামী আইনের প্রবর্তন ও প্রয়োগ

বাংলাদেশে ইসলামী আইন মূলত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আইনসমূহ হলো:

মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরিয়ত) প্রয়োগ আইন, ১৯৩৭: এই আইন অনুযায়ী মুসলিমদের উত্তরাধিকার, বিবাহ, তালাক, ভরণপোষণ ইত্যাদি বিষয়ে শরিয়তের বিধান প্রযোজ্য।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন, ১৯৭৪: মুসলিম বিবাহ ও তালাকের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করে।

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১: বিবাহ, তালাক, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত বিধান প্রদান করে।

পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫: পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠা করে।

সংবিধানে ইসলামের স্থান

বাংলাদেশের সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” লেখা রয়েছে এবং ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা একটি দ্বৈততা সৃষ্টি করেছে। এই দ্বৈততা ইসলামী আইন প্রয়োগে কিছু সীমাবদ্ধতা তৈরি করে।

ইসলামী আইন প্রয়োগের চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে ইসলামী আইন প্রয়োগে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

আইনগত দ্বৈততা: সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম উভয়ই বিদ্যমান, যা আইন প্রয়োগে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে।

প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা: ইসলামী আইন প্রয়োগে প্রশাসনিক দক্ষতার অভাব ও বিচার ব্যবস্থার জটিলতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

সামাজিক সচেতনতার অভাব: অনেক মানুষ ইসলামী আইন সম্পর্কে সচেতন নয়, যা আইন প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে।

সমাধান ও সুপারিশ

ইসলামী আইন প্রয়োগে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কিছু সুপারিশ করা যায়:

আইন সংস্কার: সংবিধানে ইসলামী আইন প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধন ও স্পষ্টতা আনা।

প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি: প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ইসলামী আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান।

সচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসলামী আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন: বিচার ব্যবস্থার জটিলতা দূর করে দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশে ইসলামী আইন ও তার প্রয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে সঠিক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব। ইসলামী আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এজন্য সরকার, প্রশাসন ও সাধারণ জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

লেখক: মহাপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ
No comments to show.